উপকারিতা এর দিক থেকে নিম পাতার অনেক সুনাম রয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকে হয়ত বা নিম পাতার উপকারিতা জানার চেষ্টা করছি। কিন্তু যথাযথ ভালো ফলাফল পাচ্ছিনা।

নিম একটি ওষধিগুণ সম্পন্ন, বহু বর্ষজীবি বৃক্ষ,চির হরিত। নিম গাছের ডাল, পাতা সবই কাজে লাগে। যেমন, নিমের কাঠ খুব শক্ত। নিম কাঠে উইপোকা বাসা বাঁধে না। ফলে নিম কাঠে কখনও ঘুণ ধরে না। নিম গাছে কোনও পোকাই বাসা বাঁধে না ,শুধু উইপোকাই নয়। তাই নিম কাঠ দিয়ে আসবাবপত্রও তৈরি করা হয়।(NimPatar Opokarita)


নিম পাতার কয়েকটি বিশেষ উপকারিতা


১.নিম তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই উপকারী।


২.নিমপাতা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক (ফাঙ্গাস) বিরোধী। তাই ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণের হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষিত করতে নিমপাতা খুবই কার্যকরী! ব্রণর সমস্যা থেকে দ্রুত নিস্তার পেতে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন।


৩.নিমের Bacteria and fungi নাশক উপাদানের জন্য খুশকি দূর হয়। নিম মাথার তালুর শুষ্কতা ও চুলকানি দূর করে দেয। ৪ কাপ জলে ১ মুঠো নিম পাতা দিয়ে গরম করতে হবে যতক্ষণ না জলটা সবুজ আকার ধারণ করে। আদার উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন।(নিম পাতার উপকারিতা)


৪.এই জল ঠান্ডা হলে চুল শ্যাম্পু করার পর জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। নিমের এই জল কন্ডিশনারের মতো কাজ করে। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন যতদিন পর্যন্ত না খুশকি দূর হয়ে যায়।


৫.ওজন কমাতে নিমের ফুলের জুস খেতে হবে। নিম ফুল মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে শরীরের চর্বি ভাঙ্গতে সহায়তা করে। ১ মুঠো নিম ফুল চূর্ণ করে এর সাথে ১ চামুচ মধু এবং আধা চামুচ লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশান। 


৬.দৈনিক সকালে খালি পেটে এই মিশ্রণটি পান করুন। এই মিশ্রণটি ওজন কমাতে সহায়তা করে। 


৭.নিম পাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে ও শর্করার মাত্রা কমায়। পাশাপাশি রক্ত চলাচল বাড়িয়ে হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে। নিমের পাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও রক্ষা করে।


৮.পোকা-মাকড় কামড়ালে বা হুল ফোঁটালে নিমের শিকড় বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম বা দূর হয়।(NimPatar Opokarita)


৯.জন্ডিস হলে নিয়মিত সকালে নিম পাতার রস সাথে মধু মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে। ২৫-৩০ ফোঁটা নিম পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। জন্ডিস নিরাময়ের জন্য ১ সপ্তাহ চালিয়ে যেতে হবে।(NimPatar Opokarita)


১০.ভারতীয় উপমহাদেশে ভাইরাস রোগ নিরাময়ে নিম (neem) ব্যবহৃত হয়। নিম পাতার রস ভাইরাস নিরাময় করে। প্রাচীনকাল থেকে চিকেন পক্স, হাম ও অন্য চর্মরোগ হলে নিমপাতা বাটা বা পেষ্ট লাগানো হতো। 


১১.আবার নিমপাতা জল সিদ্ধ করে সে জল দিয়ে স্নান বা গোসল করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি দূর হয়ে যায়।


১২.নিম পাতার জল সিদ্ধ করে সেই জল ঠাণ্ডা করে স্প্রে বোতলে রাখুন। দৈনিক ঘরে স্প্রে করলে মশার উপদ্রব একেবারেই কমে যাবে।(নিম পাতার উপকারিতা)


১৩.নিমপাতা বাতের ব্যথা সারাতে ঔষুধ হিসেবে কাজ করে। বাতের ব্যথায় নিমের তেল ম্যাসেজ হিসেবে অনেক উপকারি। 


১৪.চোখে চুলকানি হলে নিমপাতা জল ১০ মিনিট সিদ্ধ করে ভালোভাবে ঠাণ্ডা করে নিন। চোখে সেই জল ঝাপটা দিন। তারপর আরামবোধ করবেন।(NimPatar Opokarita)


আরো জানুন


১৫.নিমপাতার গুঁড়ো জলে মিশিয়ে মুখ ধুঁতে পারেন। এতে করে ব্রণ সমস্যা দূর হবে ও ব্রণের তৈরী জ্বালাপোড়া ভাবও একেবারেই দূর হবে। এটা ব্রণ দূর করার কার্যকরী পদ্ধতি।৩০ টি কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা যেগুলো।





নিম পাতার বিশেষ বিশেষ উপকারিতা



  • নিমপাতা ক্ষত নিরাময়েও বেশী উপকারী। নিমপাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখবেন। ফলে দ্রুত ক্ষত নিরাময় হবে। 

  • পাতলা পায়খানা হলে ২৫-৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস, অর্ধেক কাপ জল সঙ্গে মিশিয়ে সকাল-বিকাল খাওয়ালে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।(NimPatar Opokarita)

  • অ্যালার্জির সমস্যা হলে নিম পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে স্নান করুন। অ্যালার্জি যাবে ১০০ গজ দূরে। তাছাড়া কাঁচা হলুদ সাথে নিম পাতা বেঁটে শরীরে লাগালে অ্যালার্জি কমে যাবে।

  • একজিমা, ফোঁড়া ও বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা নিরাময়ে নিম খুবই কার্যকর। ত্বকের আক্রান্ত জায়গায় সমস্যা হলে সেখানে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন।

  • নিমের তেল, বাকল ও পাতার নির্যাস ব্যবহারে ফলে ক্যান্সার-টিউমার, স্কীন ক্যান্সার প্রভৃতি ভালো হয়।

  • বমি হলে নিম পাতার রস ৪-৫ ফোঁটা সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে বমি উপশম হয়। 

  • নিমের ফুল ভাজা খেলে রাতকানা রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।(NimPatar Opokarita)

  • কাঁচা হলুদের সাথে নিম পাতা পেস্ট বসন্তের গুটিতে দিলে গুটি বা বসন্ত দ্রুত শুকিয়ে যায়।

  • নিম গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বিশ্বে নিমের কদর কারণ অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহারের জন্য।

  • নিমর ছালে Immunomodulatory Polysaccharide Compound আছে – যা শরীরের অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সহায়তা করে৷ ফলে অর্থাক্রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বাড়বে৷

  • নিম তেলটির চড়া গন্ধ৷ নিমের তেল লাল রঙের হয়। এতে ট্রাইগ্লিসারাইড, ট্রাইটারপিনয়েড ইত্যাদি যৌগ আছে৷ কীটনাশক এমনই এক যৌগ৷ এতে এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড আছে৷ 

  • চামড়ার প্রদাহ কমাতে নিমতেল খুবই কাজে লাগে৷ নিমতেল গর্ভনিরোধন হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷

  • অর্ধেক কাপ তাজা নিমপাতার উপর ফোটানো গরম জল ঢেলে নিন৷ মাএ ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন৷ তারপর ভালোভাবে ছেঁকে নিন৷ ধীরে ধীরে সেই জল পান করুন৷ এতে জ্বর-সর্দি কমবে, রক্তের সুগার মাএা কমবে৷ 

  • ব্লাডারের সমস্যা, জন্ডিস, পেটে কৃমি, ম্যালেরিয়া, চামড়ার ইত্যাদি রোগ ভালো হয়ে যাবে৷ নিমের চা ক্ষত বা চোটের আঘাত সরাতে সাহায্য করে। 

  • নরম নিম ডালের দাঁতন গ্রামীণ বা গ্রামে এখনও চলে৷ পাশাপাশি শহরে ও মফস্‌সলেও৷ নিম মাড়ির স্বাস্থ্য সুস্থ-সবল রাখে৷ দাঁতের অসুখ-বিসুখ ও সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে৷

  • ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে নিয়মিত নিমপাতার সঙ্গে কাঁচা হলুদ ভাল করে বেটে মেখে দেখুন। খেয়াল রাখতে হবে, মিশ্রণে নিমপাতার চেয়ে হলুদের পরিমাণ যেন কম হবে। তবে হলুদ ব্যবহার করার পর কয়েক ঘণ্টা রোদ এড়িয়ে চলাই ভাল।

  • দাঁতের জন্য নিমের ডাল খুবই উপকারী। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে আর দাঁতের ফাঁকে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করতে নিম বেশ কার্যকরী।

  • কেটে-ছড়ে গেলে বা পুড়ে গেলে ক্ষত স্থানে নিম পাতার রস ভেষজ ওষুধের মতো কাজ করে।

  • নিম পাতা রোদে শুকিয়ে ভাল করে গুঁড়ো করে রেখে দিতে পারলে পরবর্তীকালে তা ফেস প্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।