আদা মসলা হিসেবে পরিচিত । এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় একটি প্রজাতি। রাইজোম বাইরের দিকে হলুদাভ, ভেতরে হালকা হলুদ-সবুজ। বড় বিন্যস্ত পাতার অনেকগুলি চওড়া বৃন্তে গঠিত ভুয়োকান্ড উপরে ১৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
আদার উপকারিতা |
আদার উপকারিতা কি কি
১.ঠাণ্ডা লাগা,জ্বর, ব্যথায় আদা উপকারী। আদায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা বডি টেম্পারেচারে ভারসাম্য বজায় রাখতে অনেক সাহায্য করে। শীতকালে ঠাণ্ডার সময় আদা চা খেতে পারেন।
২.গা গোলানো ও বমিভাব থেকে রেহাই পেতে কয়েক কুচি আদা চিবিয়ে খেয়ে দেখুন। সমস্যা অনেকটা কমবে।
৩.ঋতু পরিবর্তনের সময় অ্যাজমা, মাইগ্রেনের মতো সমস্যা প্রায়শই দেখা যায়। এই সময়ে ডায়েটে আদা রাখুন। সর্দি-কাশির প্রকোপের সময় মুখে আদা রাখলে, আরাম পাবেন।
৪.অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আদা ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আদার উপকারিতা বিশেষ করে ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে আদা উপকারী।
৫.অতিরিক্ত ওজন কমাতেও আদা সাহায্য করে। টিস্যু বেশি এনার্জি ব্যবহার করায়, বেশি ক্যালরি বার্ন হয়।
৬.আর্টারি ওয়ালে ব্যাড কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি অ্যাসিড জমে করোনারি হার্ট ডিজিজের সমস্যা দেখা যায়। ফলে রক্ত চলাচলে অসুবিধে দেখা যায়। আদা রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। লিভার ও ব্লাডে কোলেস্টেরল অ্যাবজর্বশন কম রাখতে আদা সাহায্য করে।
৭.অসটিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে শরীরের প্রায় প্রতিটি হাড়ের জোড়ায় প্রচুর ব্যথা হয়। এই ব্যাথা দূর করে আদা। তবে রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদা এক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী, এতে আদার পুষ্টিগুণও বেশি থাকে। শরীরের যেকোন ধরনের ব্যথাতে আদা টনিকের মতো কাজ করে।
৮.দেহের কোথাও ক্ষত থাকলে তা দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে আদা। এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, যা কাটাছেঁড়া, ক্ষত দ্রুত ভালো করে।
৯.দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আদা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আদার উপকারিতা হলো আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে, দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা লুকানো জীবাণুকে ধ্বংস করে।
১০.যানবাহনে চড়ার সময় কেউ কেউ অস্বস্তিতে ভোগেন বা কিছুক্ষণ গাড়িতে থাকার পর বমি চলে আসে। বমি বমি ভাব দূর করতে আদার ভূমিকা অপরিহার্য। বমি ভাব হলে কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এটি তাৎক্ষণিক উপকার মেলে। আর এতে মুখের স্বাদও বাড়ে।
- রসুনের উপকারিতা
- মধুর উপকারিতা
- মেথির উপকারিতা
- বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- কিসমিসের উপকারিতা
- কালোজিরার উপকারিতা
- অশ্বগন্ধার উপকারিতা
- খেজুরের উপকারিতা
১১.রক্তের অনুচক্রিকা এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখতে আদা খুবই কার্যকর।
১২.মাইগ্রেনের ব্যথা ও ডায়াবেটিসজনিত কিডনির জটিলতা দূর করে আদা। গর্ভবতী মায়েদের সকাল বেলা, বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম দিকে শরীর খারাপ লাগে। কাঁচা আদা দূর করে এ সমস্যা।
১৩.পরিমিত আদা খাওয়ার অভ্যাসে শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়। আদায় রয়েছে ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক। এসব উপাদান রক্ত প্রবাহের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে।
১৪.ঠাণ্ডা লাগা ও ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধে আদা বিশেষ ভূমিকা রাখে। আদার রস একটু গরম করে সমপরিমান মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে কয়েকবার খেলে ঠাণ্ডা লাগা ও ভাইরাস জ্বর সেরে যায়।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৪৯,৪০৫ মে টন আদা ফলে ১৯,০৫৫ একর জমিতে। মসলা ও আচার ও তরকারির উপকরণ হিসেবে আদা বেশি ব্যবহূত হয়। আদার ঔষধি গুণও রয়েছে। বৃষ্টিধৌত উঁচু জমি ও পাহাড়ের উতরাইয়ে আদার চাষ ভাল হয়। দিনাজপুর, রংপুর, টাঙ্গাইল ও রাঙ্গামাটি জেলায় আদার অধিক ফলন হয়।
আদা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের জীবাণু ও রোগকে ধ্বংস করে। জ্বর জ্বর ভাব, গলা ব্যথা ও মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। তবে আদার উপকারিতা রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ বেশি। মাইগ্রেনের ব্যথা ও ডায়াবেটিস জনিত কিডনির জটিলতা দূর করে আদা।
আরো জানুন
১০০ গ্রাম আদায় যা রয়েছে
- এনার্জি: ৮০ ক্যালরি
- ফ্যাট: ০.৭৫ গ্রাম
- পটাশিয়াম: ৪১৫ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ১৭ গ্রাম
- ফসফরাস: ৩৪ মিলিগ্রাম
আদা খাওয়ার সতর্কতা
১.গর্ভাবস্থায় সারা দিনে ২৫০ গ্রামের বেশি আদা খাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
২. গলস্টোনের সমস্যা থাকলে কত পরিমাণ আদা খাবেন, ডাক্তারের থেকে জেনে নিন।
আদার আরো কিছু ওষুধি দিক
১. আদা হজমে সাহায্য করে।
২. আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগলে সারা দিনের খাবারে অল্প পরিমাণে আদা রাখার চেষ্টা করুন। আদা দিয়ে চা খেতে পারেন, সালাদে আদার সরু, লম্বা কুচি মেশাতে পারেন। ব্যথার সমস্যা ধীরে ধীরে কমবে। ঘন ঘন ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস কমিয়ে আদা খেয়ে দেখতে পারেন। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে জিঞ্জার অয়েল উপকারী।
৩. গর্ভবতী মহিলাদের সকালে খারাপ লাগার সমস্যা কমাতে আদা সাহায্য করে।
আদা কিভাবে খাবেন
১. পানি ফুটিয়ে নিন। এবারে দুধ, মসলা, আদার রস, চা পাতা দিয়ে আরো একবার ফুটিয়ে নিন। কাপে চিনি দিয়ে পরিবেশন করুন। ওপরে সামান্য এলাচগুঁড়ো ছড়িয়ে দিতে পারেন।
২. হজমে সাহায্য করার জন্যে আদা দিয়ে সিরাপ বানিয়ে নিন। জিরে গুঁড়ো, বিট নুন, আদার রস, লেবুর রস, ঠাণ্ডা জল একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। তৈরি আদার সিরাপ। দুপুরে বা রাতের খাবারের পরে এই সিরাট খেতে পারেন।
৩. ভিনিগারে আদার টুকরো, লবণ, মরিচ দিয়ে কিছু দিন রাখুন। খাওয়ার সময় আচার হিসেবে খেতে পারেন।
৪. আদায় সামান্য পানি দিয়ে থেতলে নিন। আদার রস ও আদা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। চা বানানোর জন্যে এই পানি ব্যবহার করুন।
৫. সারা দিনে ৫০ গ্রাম আদা খেতে পারেন। পাউডারড জিঞ্জার আধা চামচ করে দিনে ৩ বার খেতে পারেন। আদা সরু লম্বা করে চিকন করে কেটে নিন। সামান্য লবণ, গোলমরিচ মেশান।
৬. আদা ছিলে , সামান্য লেবুর রস মেশান। হজমে এই মিশ্রণ খুব ভালো কাজ করে।
0 মন্তব্যসমূহ