উপকারিতা এর দিক থেকে রসুনের অনেক সুনাম রয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকে হয়ত বা রসুনের উপকারিতা জানার চেষ্টা করছি। কিন্তু যথাযথ ভালো ফলাফল পাচ্ছিনা। আমরা অনেক জায়গা থেকে তথ্য খোঁজার চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছি, তাই না?
রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা (Rosoner Opokarita)
আজকে আপনাদের সামনে হাজির করব কিছু রসুনের উপকারিতা। আপনাদের এই জানার আগ্রহ এর জন্য, আমরা চিন্তা করেছি রসুনের এর বিষয় নিয়ে কিছু লিখব।
আপনি যদি আমাদের এই ওয়েবসাইটে নতুন হয়ে থাকেন। তা হলে আমাদের েএই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি আপনারা রসুনের এর উপকারিতা বিষয় সম্পর্কে ভালো জানতে পারবেন।
প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে জানতে পারবেন, তখন রসুন কিন্তু শুধু বিভিন্ন অসুখ সারানোর জন্যই ব্যবহার হতো। মিসরীয়,গ্রিক,রোমান ব্যাবিলনীয় ও চৈনিক সভ্যতায় ওষুধ হিসেবে রসুন ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এমনকি সকালে খালি পেটে রসুন চিবানোও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
রসুন আমাদের খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান; এই রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২),প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম ক্যানসার প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। রসুনের মধ্যে রয়েছে এলিসিন নামে এক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি উপাদান, যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন ক্যানসারসহ দূর করতে কার্যকর। এই এলিসিন নামে যে কম্পাউন্ড রসুনে পাওয়া যায়, তার কারণে রসুনকে সুপারফুডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রসুনের উপকারিতা বিভিন্ন পয়েন্ট (Rosoner Opokarita)
- স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- রসুন হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। পাশাপাশি পরিপাকতন্ত্রের নানা সমস্যা দূর করে।
- উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দূর করে রসুন। সেই সঙ্গে যক্ষ্মা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
- যৌন ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করে। যৌনমিলনের অসাবধানতাবশত রোগ ট্রিকোমোনিয়াসিসের হাত থেকে রক্ষা করে রসুন।
- রান্না হয়ে গেলে রসুনের মধ্যে থাকা অ্যালিসিন অ্যাসিড নষ্ট হয়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি অ্যালিসিনের প্রাথমিক উপকারিতা হল ক্যান্সার রুখে দেওয়া। অ্যালিসিন অ্যাসিড শরীরে ক্যান্সারকে বাসা বাঁধতে দেয় না।রসুন খেলেই একমাত্র অ্যালিসিন শরীরে ঢোকে।
মধু ও রসুন এর কিছু উপকারিতা
- রসুন ও মধু: রসুনের ২-৩টি কোয়া কুঁচিয়ে নিন। তার সঙ্গে এক টেবিলচামচ মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণ খেলে শরীর ফিট ও এনার্জিতে ভরপুর থাকবে।
- একটি পাত্রে পেঁয়াজ-রসুন-আদা-শুকনো লঙ্কা কুচি মেশান। আলাদা পাত্রে লেবু চিপে রস তৈরি রাখুন। এবার কুচোনো উপকরণে লেবুর রস মেশান। সব শেষে ভিনিগার ঢেলে মিশিয়ে অন্তত ১ সেন্টিমিটার ফাঁক রেখে পাত্রটি ঢেকে রাখুন। সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা ও ফ্লু সারাতে নিয়মিত ব্যবহার করুন।
- রসুনের টনিক: অতিরিক্ত সংবেদনশীল ত্বক হলেল এই টনিক বানানোর সময় হাতে দস্তানা পরে নিন এবং চোখে হাতের ছোঁয়া এড়িয়ে চলুন। জোগাড় করে ফেলুন অর্ধেক পেঁয়াজ কুচি, ৫ কোয়া রসুন কুচি, ২টি শুকনো লঙ্কা কুচি, ১ টেবিলচামচ আদা কুঁচি, একটি গোটা পাতিলেবুর রস এবং অ্যাপল সিডার ভিনিগার।
চুলের জন্য রসুনের উপকারিতা
১.চুলপড়া রোধে রসুনের একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি হল কাঁচা রসুনের সিরাম। রসুনের তেলের সাথে এক টেবিল চামচ কাঁচা রসুনের রস মিশিয়ে নিন। এবার একটি তুলোর বলে সেটি লাগিয়ে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে লাগান। কয়েক মিনিট মাথার তালু ম্যাসাজ করুন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ভাল করে চুল ধুয়ে ফেলুন। ভাল ফল পাওয়ার জন্য এটি প্রতি রাতে ব্যবহার করুন।
২.রসুনের কয়েকটি কোয়া নিয়ে রস করে নিন। এটি সরাসরি মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে লাগান। তবে এটি গোসলের আগে চুলে লাগিয়ে নিন। এটি মাথায় রেখে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এক্ষেত্রে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন।
৩.প্রথমে রসুনের কোয়া রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর এটি গুঁড়ো করে পাউডার তৈরি করুন। এবার কন্ডিশনার সাথে রসুনের পাউডার মিশিয়ে নিন। এটি চুলে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে এতে রসুনের রসও মেশাতে পারেন। এটি চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে।
৪.অলিভ অয়েলের বোতলে এক টুকরো রসুন দিয়ে দিন। এভাবে এক সপ্তাহ রাখুন। এরপর প্রতিদিন রাতে এই তেল চুলে ব্যবহার করুন। পরের দিন সকালে চুল শ্যাম্পু করে নিন। এটি ব্যবহারে কয়েক সপ্তাহের মাঝে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
আরও পড়ুন
এক কোয়া রসুনের উপকারিতা কি কি
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে রসুন। বিশেষ করে রোজ যদি কেউ এক কোয়া রসুন খান, তার ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কিছুটা কমতে পারে।
- যারা সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খান, তাদের হৃদরোগের আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, শরীর চট করে ক্লান্ত হয় না।
- সবচেয়ে বড় কথা, শরীরকে দূষণমুক্ত করতে রসুন খুবই কার্যকর। সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেলে শরীরে জমা টক্সিন দ্রুত সাফ হয়ে যায়। সার্বিকভাবে সুস্থতা বাড়ে এর ফলে।
- অনেকেই সারা বছর সর্দি-কাশির সমস্যায় ভোগেন। ঠান্ডা লাগা কমতেই চায় না। তারা যদি নিয়মিত সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খান, তিন সপ্তাহেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ওজন কমাতে রসুনের কিছু উপকারিতা
রসুন যখন খালি পেটে খাওয়া হলে তা আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে পরিপূর্ণ রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে।
এভাবেই তা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি ক্ষুধা দমনকারী হিসাবে কাজ করে, যা আপনাকে বারবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে। জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন চর্বি পোড়ানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী। এতে ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে, সেইসঙ্গে হজম সহজ করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি কি
প্রাচীনকাল থেকেই রসুন খেয়ে আসছে যৌন উপকার বৃদ্ধির জন্য, রসুন খেলে বীর্যের পরিমান বৃদ্ধি পাবে, বীর্য ঘন ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। নিয়মিত রসুন খেলে বীর্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ফলে যৌন সহবাসের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে এছাড়াও সেক্সে রসুনের উপকারিতা অধিক সময় সহবাস করা যাবে দ্রুত বীর্যপাত পতন রোধ করতে থাকা উপাদানগুলো কাজ করে থাকে।
সহজ করে বলতে গেলে রসুন এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে বীর্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে যার ফলে লিঙ্গ শক্তিশালী হয় বীর্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সহবাসের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সকালের নাস্তার পূর্বে যদি রসুন(Garlic) খাওয়া হয় এটি আরও কার্যকরীভাবে কাজ করে। খালি পেটে রসুন খাবার ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো উন্মুক্ত হয় এবং তখন রসুনের ক্ষমতার কাছে তারা নতিস্বীকার করে। এতে শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সমূহ ধ্বংস হয়।
আরও পড়ুন
আদা ও রসুনের কিছু বিশেষ উপকারিতা
আদা, রসুন এবং মধু গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসার জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে মিশ্রণটি মানবস্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
0 মন্তব্যসমূহ