আপনি ‍যদি বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার ব্যপারে দ্বিধা দন্দের মধ্যে থাকেন। তা হলে আপনার এই প্রশ্ন আসবে যে বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কোনটি। তাই আপনাদের জন্য এই পোস্ট।

যেকোন মিষ্টি খাবারের স্বাদ এবং সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কিসমিস ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও পোলাও, কোরমা এবং অন্যান্য অনেক খাবারে কিসমিস ব্যবহার কর হয়। রান্নার কাজে ব্যবহার করা হলেও কিসমিস সাধারণত কেউ খান না। 


বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম



অনেকে এটাকে শুধু খাওয়াকে ক্ষতিকর মনে করেন। অথচ পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে রয়েছে এনার্জি ৩০৪ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৬ গ্রাম, ডায়েটরি ফাইবার ১.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম,আয়রন ৭.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম,  পটাসিয়াম ৭৮ মিলিগ্রাম ও সোডিয়াম ২০.৪ মিলিগ্রাম। এটি রক্তে শর্করার মাত্রায় ঝামেলা তৈরি করে না। এটি খেলে শরীরের রক্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, পিত্ত ও বায়ুর সমস্যা দূর হয়। এটি হৃদপিণ্ডের জন্যও অনেক উপকারি।

কিসমিস খাওয়ার নিয়ম:১৫০ গ্রাম কিসমিস ভালো ধুয়ে ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। পরেরদিন সকালে কিসমিস ছেকে নিয়ে সেই পানি হালকা গরম করে খালি পেটে খেয়ে নিন। এর পরে আধ ঘন্টা আর অন্য কোনও খাবার খাওয়া চলবে না। সপ্তাহে কমপক্ষে চারদিন এই পানি খেলে এক মাসের মধ্যেই তফাৎটা অনুভব করবেন।


বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা


  • কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা প্রভৃতি সমৃদ্ধ কিসমিস সত্যিই দারুণ উপকারী৷ এটি কিন্তু আপনার বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : কিসমিস কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। কারণ কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে তন্তু থাকে৷ ফলে বাচ্চার কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা হয় না৷ ছোটবেলায়ও এ সমস্যা হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে কিসমিস জলে ফুটিয়ে সেটাকে থেঁতো করে মিহি করে নিতে হয়৷ ফলে কিসমিস নরম হয়ে যায় এবং তা বাচ্চারা সহজেই খেতে পারে৷

  • প্রচুর খনিজ থাকে বাচ্চাদের পুষ্টি এবং বৃদ্ধির জন্য তার খাদ্যতালিকায় খনিজ রাখা জরুরি৷ সেক্ষেত্রে কিসমিসে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা প্রচুর পরিমাণে থাকায় বাচ্চার বিকাশ ঘটার ক্ষেত্রে ভূমিকা নেয় এটি৷ তাই সন্তানের ডায়েটে অন্তত একবার কিসমিস রাখার চেষ্টা করুন।

  • জ্বরে উপকারী : বাচ্চাদের জ্বরজারি লেগেই থাকে৷ সেক্ষেত্রে কথায় কথায় ঘাবড়ে গেলে চলবে না৷ বরং এক কাজ করুন, বাচ্চাকে কিসমিস খাওয়ান৷ জ্বরে এটি ওষুধ হিসেবে কাজ করে৷ ফলে এটি খাওয়ানো যেতেই পারে৷ অসুস্থ বাচ্চা এটি খেয়ে ফের আগের মতো দুষ্টুমি শুরু করবে৷ তাই বলে ওষুধ বন্ধ করে শুধু কিসমিস খাওয়াবেন না।

  • হিমোগ্লোবিন বাড়ায় :  বাচ্চার দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিকমত বাড়ছে কিনা সেই খবর রাখা জরুরি৷ কিসমিসে যেহেতু প্রচুর মাত্রায় লৌহ থাকে তাই তাকে কিসমিস খাওয়ান৷ এতে দেহে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়বে সহজেই।

  • অ্যাসিডিটি দূর : অ্যাসিডিটি কমায় বাচ্চাদেরও অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়৷ তবে সে তো আর যখন তখন অ্যাসিডিটির জন্য ওষুধ খেতে পারে না৷ সেক্ষেত্রে ওকে কিসমিস খাওয়ান৷ এতে দেহে অ্যাসিডের পরিমাণে সামঞ্জস্য বজায় থাকবে৷ ফলে বাচ্চার অসুবিধা হবে না।

  • শিশুর বিকাশ : মস্তিষ্কের বিকাশে কিসমিস সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে উন্নত করে৷ ফলে কোনো রকম ব্রেন ইঞ্জুরি সারার ক্ষেত্রে ভূমিকা নেয় এটি৷ বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশেও এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।


  • সুস্বাদু বাচ্চাকে খাওয়ানো যে কতটা ঝক্কির কাজ সেটা আমরা বুঝি৷ তবে কিসমিস যেহেতু খেতে মিষ্টি এবং সুস্বাদু তাই বাচ্চা এটি খেতে আপত্তি করবে না৷ তাছাড়া এর গুণাগুণ তো আর অজানা থাকল না৷ তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত কিসমিস যেন বাচ্চা না খায়।
  • বাচ্চারা ক্যান্ডি ও চকলেট খেয়ে দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু এগুলির পরিবর্তে বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করালে দাঁতের সুরক্ষা হবে। আবার একই স্বাদ পাওয়ার সাথে সাথে বিপুল পরিমাণ উপকারও পাবে। চিনি থাকার পাশাপাশি কিসমিসে রয়েছে ওলিনোলিক অ্যাসিড, যা মুখের ভেতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে বাঁধা দেয়।


  • দুর্বলতা দূরীকরণে কিসমিসের জুড়ি নেয়। দেহে শক্তি সরবরাহ করতে কিসমিসের অবদান অনেক বেশি। কিসমিসে রয়েছে চিনি, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ, যা তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহ করে থাকে। তাই দুর্বলতার ক্ষেত্রে কিসমিস খুবই উপকারী।

  • কিশমিশে কোন কোলেস্ট্রোরেল নাই–এটাই বড় কথা না। বরং কিশমিশে আছে এন্টি-কোলোস্ট্রোরেল উপাদান যা রক্তের খারাপ কোলোস্ট্রোরেলকেহ্রাস করতে সাহায্য করে। কিশমিশের দ্রবণীয় আশ, লিভার থেকে কোলোস্ট্রোরেল দূর করতে সাহায্য করে। এক কাপ কিশমিশে আছে ৪ গ্রাম পরিমাণ দ্রবণীয় আঁশ। পলিফেনল নামক এন্টি-অক্সিডেন্টও কোলোস্ট্রোরেল শোষণকারী এনজাইমকে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • বর্তমানে সময়ে অনেক রুগী অস্টিওপরোসিস (হাড়ের একধরনের রোগ) আক্রান্ত হচ্ছেন। বোরন নামক খনিজ পদার্থের অভাবে এই রোগ হয়। কিশমিশে আছে প্রচুর পরিমাণ বোরন, যা অস্টিওপরোসিস রোগের প্রতিরোধক। সুতরাং পরিবারের সবাইকে কিশমিশ খাওয়ার অভ্যাস করানো উচিত।
  • কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত করতে বেশ ভূমিকা পালন করে। কিসমিসে আরো রয়েছে বোরন নামক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস হাড়ের ক্ষয় এবং বাতের ব্যথা থেকে দূরে রাখবে। 

  • কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পলিফেনলস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরী উপাদান। যা কাঁটা-ছেড়া বা ক্ষত হতে ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে দূরে রাখে।
  • কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হওয়ায় বাধা প্রদান করে। কিসমিসে আরো রয়েছে ক্যাটেচিন, যা পলিফেনলিক অ্যাসিড। এটি ক্যান্সার মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। খাবারে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকলে কোলোরেক্টারাল ক্যান্সার ঝুঁকি কমে যায়। এক টেবিল চামচ কিশমিশ ১ গ্রাম পরিমাণ আঁশ থাকে। সুতরাং কিসমিসের আঁশ ক্যান্সারের ঝুঁকি একেবারে কমিয়ে দেয়।

  • কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা আমাদের পরিপাকক্রিয়া দ্রুত হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

  • রক্তশূন্যতার কারণে অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা, বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এমনকি, বিষণ্ণতাও দেখা দিতে পারে। কিশমিশে আছে, প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান, যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

  • কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ব্যাকটেরিয়ারোধী, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফলে এটা ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জ্বর নিরাময় করতে সাহায্য কারে।

  • রক্তে ভিটামিন এ, এ-বিটা ক্যারোটিন এবং এ-ক্যারোটিনয়েড থাকে। কিসমিস এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। যা চোখের ফ্রি-রেডিকল দূর করতে সক্ষম। কিসমিস খেলে সহজে শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে না। দৃষ্টি শক্তি হ্রাস ও চোখে ছানি পড়ে না। পাশাপাশি পেশী শক্তি হ্রাস পায় না। কিসমিস চোখের জন্য খুব উপকারি।
  • কিশমিশ শুধুমাত্র রক্তের মধ্যে থাকা বিষো উপাদান কমায় তাই না, বরং রক্তচাপও কমায়। কিশমিশের প্রধান উপাদান, পটাশিয়াম, রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে থাকা উচ্চমাত্রার সোডিয়াম, রক্তচাপ বাড়ার প্রধান কারণ। কিশমিশ শরীরের সোডিয়াম মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

  • কিসমিসে প্রচুর ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে। তাই এটি ওজন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যদি সঠিক নিয়মে ওজন বাড়াতে চান তবে আজই কিসমিস খেতে পারেন।

  • অনেকের ঠিকমত ঘুম আসে না। তাদের জন্য কিসমিস অনেক উপকারি। কারন কিশমিসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা মানুষের অনিদ্রার চিকিৎসায় বিশেষভাবে উপকারী। তাই আজ থেকে কিসমিস খাওয়া শুরু করুন, দেখবেন অনেক উপকার পাবেন।

  • রক্তে অধিক মাত্রায় এসিডিটি বা টক্সিসিটি থাকলে, তাকে বলা হয়, এসিডোসিস। এসিডোসিসের  কারণে বাত, চর্মরোগ, হৃদরোগ ও ক্যান্সার হতে পারে। কিশমিশ রক্তের এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।

  • কিসমিস কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত কিসমিস খেলে হজমশক্তি ভাল থাকে। এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল (মুখ থেকে পায়ু) পথ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

  • অনেকে মিষ্টি স্বাদের জন্য কিসমিসকে কেন্ডির সাথে তুলনা করে ভুল করেন। তারা মনে করেন এটি দাঁত ও মুখের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কিসমিসে অলিনিলীক এসিড থাকে। এটি মুখের ভিতর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার জন্ম ব্যহত করে।

  • কিসমিসে থাকা বোরন মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি। বোরন ধ্যান বাড়াতে সহায়ক। ফলে কাজে মনোযোগ বাড়ে। এটি বাচ্চাদের পড়াশোনাতেও মনোযোগী করে তুলতে পারে।