এলোভেরার উপকারিতা চুলের যত্নে কতটা । এলোভেরা শুধু চুলের যত্নে ব্যবহার হয়ে থাকে না এলোভেরার রয়েছে আরও অসংখ্য কার্যকারী উপকারিতা। তাই সৌন্দর্যের চূড়ায় পৌঁছাতে হলে আপনার জন্য ভালো একটি গাইড হতে পারে এলোভেরা নামক এই উপাদানটি।
এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জেনে নিন
এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা |
এলোভেরা শুধু ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে না সেইসাথে দূরে রাখে বিভিন্ন ধরনের স্কিন প্রবলেম। তাছাড়া এলোভেরার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক অ্যালোভেরার কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কেঃ
১.ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে
সাধারণত ছোটখাটো কাটা, পোড়া, এলার্জি সহ ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে এলোভেরা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। অ্যালোভেরা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে।
আর্দ্র ত্বকে বলিরেখা পড়ে থাকে এটা আপনারা সবাই জানেন। তাই আপনি চাইলে এই ক্ষেত্রে এলোভেরার জেলটি সরাসরি নিয়ে আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।তাছাড়া এতে আরও রয়েছে অ্যামাইনো এসিড, এনজাইম আর স্টেরল।
তাছাড়া এলোভেরা জেল দুধ,মধু,হলুদ অথবা সামান্য দুধের সর মিশিয়ে মুখে মাস্কের মত করে লাগালে এটা ব্রন তাড়াতেও সাহায্য করে থাকে।
রোদে পোড়া ত্বকে এলোভেরা শসা এবং দইয়ের মিশ্রন যদি আপনি লাগান তাও ত্বকের জন্য অনেক উপকার করে থাকে।
২.ওজন কমাতে সাহায্য করে এলোভেরা
ওজন কমাতেও এলোভেরার উপকারিতা রয়েছে। দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে কার্যকারী এই উপাদান অ্যালোভেরা। এলোভেরার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল। যা সাধারণত শরীরের পুষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
৩.এলোভেরা চুল সুন্দর করতে সাহায্য করে
চুলের যত্নে এলোভেরার উপকারিতা অনেকাংশে বেশি কার্যকরী। চুলের সৌন্দর্য অটুট রাখতে সাহায্য করে থাকে এলোভেরা।
এলোভেরার নিয়মিত ব্যবহার মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ঝলমল চুলে এলোভেরা আরো অনেক উপকারী। তাই এক্ষেত্রে আপনি যদি চুলের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে অ্যালোভেরা হতে পারে আপনার নিত্য সঙ্গী।
৪.মাংসপেশি ওর জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে
এলোভেরা মাংসপেশি এবং জয়েন্টের ব্যথা দূর করে থাকে। আপনার যদি কোন জায়গায় ব্যথা থাকে তাহলে আপনি এলোভেরা থেকে জেল বের করে নিয়ে সেই আক্রান্ত স্থানে মালিশ করতে পারেন এর মাধ্যমে আপনার ব্যথা অনেক কমে যাবে।
৫.হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এলোভেরা
এলোভেরার জুস হার্টকে সুস্থ এবং সক্ষম রাখতে খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। অ্যালোভেরা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক কমিয়ে দিয়ে থাকে। তাছাড়া এটা ব্লাড পেশার কে নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে থাকে।
এলোভেরার নিয়মিত ব্যবহার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। তাছাড়া অ্যালোভেরা দেহের দূষিত রক্ত কণিকা বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যার ফলে দীর্ঘদিন আপনার হৃদপিণ্ড এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ এবং সবল থাকে।
৬.ক্লান্তি দূর করে থাকে
ক্লান্তি দূর করতে এলোভেরার উপকারিতা রয়েছে। দেহের দুর্বলতা দূর করার জন্য অ্যালোভেরা হচ্ছে খুবই কার্যকরী একটি উপাদান।
আপনি যদি নিয়মিত এলোভেরার জুস খান তাহলে আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর হবে এবং শরীর থাকবে সকল সময় সুস্থ এবং সতেজ।
৭.দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখে
এলোভেরার জুস দাঁতের এবং মাড়ির সুস্থতার জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। দাঁতে যদি কোন ধরনের ইনফেকশন থেকে থাকে তাহলে তা দূর করতে সাহায্য করে এলোভেরা।
নিয়মিত যদি এলোভেরার জুস খেতে পারেন তাহলে সেটা দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে এবং আপনাদেরকে সুস্থ রাখে।
৮.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
এলোভেরা হল মূলত এন্টি মাইক্রোবিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ একটি ভালো গাছ। এলোভেরার জুস নিয়মিত খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং এটা শরীর থেকে টক্সিন উপাদান দূর করে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। যা সাধারনত এলোভেরার দারুন একটি উপকারিতা গুন।
৯.হজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য এলোভেরার জুস এর জুড়ি মেলা ভার। এলোভেরার জুস অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে প্রদাহ সৃষ্টি কারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে থাকে, যার ফলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
তাছাড়া এলোভেরার আরো একটি ভাল গুণ রয়েছে সেটি হচ্ছে ডায়রিয়ার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ডায়রিয়া সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে এই এলোভেরা।
১০.কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে থাকে
এলোভেরার জুস এর মধ্যে যে জেল বিদ্যমান তার গুণ অসংখ্য। এই যেল যদি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে।
তাছাড়া এলোভেরা জেলে রয়েছে ১৯ থেকে ২০ রকমের অ্যামাইনো এসিড যা সাধারণত যা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ রোধ করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
এলোভেরা বুকের জ্বালাপোড়া রোধ করে থাকে। তাই যদি স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার ব্যবহার করতে পারেন তাহলে অবশ্যই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
আরো জানুন
১১.ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
এলোভেরার জুস রক্তের সুগারের মাত্রা বজায় রেখে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। তাই যদি কেউ ডায়বেটিস শুরুর প্রথম দিকে নিয়মিত এলোভেরার জুস সেবন করতে পারেন তাহলে ডায়াবেটিস সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আর যদি কেউ ডায়বেটিস এর সমস্যায় ইতিমধ্যে পড়ে থাকেন তারা খাওয়ার আগে এবং পরে নিয়মিত এলোভেরার জুস পান করুন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
১২.ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
এলোভেরার মধ্যে রয়েছে এলো ইমোডিন যা সাধারনত মেয়েদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। তাছাড়া আরও অনেক ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এলোভেরা কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
১৩.চর্মরোগ এবং ক্ষত সারাতে
এলোভেরা প্রাকৃতিক ঔষধি এর কাজ করে থাকে। অ্যালোভেরা বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ এবং ক্ষত সারাতে দারুণ কার্যকারী। এজন্য সাধারণত এসব সমস্যাই প্রাথমিক অবস্থায় অ্যালোভেরার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
১৪.মুখের ঘা সারাতে সাহায্য করে থাকে
মুখের ঘা সারানোর জন্য অ্যালোভেরা হতে পারে আরেকটি দারুন উপাদান। মুখের ঘা সারাতে অ্যালোভেরার উপকারিতা বলাই বাহুল্য।
ভিটামিন বি এর অভাবে অনেকের মুখে ঘা হয়ে থাকে এবং এই ঘা সারানোর জন্য অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী। ঘায়ের জায়গায় যদি অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে দেয়া যায় তাহলে মুখের ঘা অনেকাংশে ভালো হয়ে যাই।
১৫.মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে থাকে
অ্যালোভেরার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা সাধারণত মুখের দুর্গন্ধ দূর করে মাড়ি ফোলা এবং মাড়ি থেকে রক্ত পাত দূর করতে সাহায্য করে। তাই আপনার মুখে যদি দুর্গন্ধ হওয়ার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অ্যালোভেরার ব্যবহার করতে পারেন।
১৬.অর্শরোগে এলোভেরার উপকারিতা
অর্শরোগের স্বভাবধর্ম কোষ্ঠ-কাঠিন্য হওয়া। সেটা থাকুক আর নাই থাকুক, এক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫–৭ গ্রাম মাত্রায় একটু ঘি দিয়ে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে ২ বার খেতে হবে। এর দ্বারা দাস্ত পরিষ্কার হবে এবং অর্শের অনেকউপকার হবে।
১৭.শক্তিবর্ধক কাজে এলোভেরার উপকারিতা
নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস সেবন শরীরের শক্তি যোগান সহ ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।যাদের শুক্রাণু পাতলা তাদের জন্য ২ চা-চামচ চটকানো ঘৃতকুমারী পাতার শাষ এবং ২ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে শরবত করে ১৫–২০ দিন খেলে পাতলা শুক্রাণু অকারণে স্খলন একেবারে বন্ধ হবে।
১৮.প্রদাহ কমায়
ঘৃতকুমারীর রস হাড়ের সন্ধিকে সহজ করে এবং দেহে নতুন নতুন কোষ তৈরি করে। এছাড়াও হাড় এবং মাংশপেশির জোড়া গুলোকে মজবুত করে। সেইসাথে শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ প্রশমনে কাজ করে।
১৯.মেছতা নিরাময়ে এলোভেরার উপকারিতা
আপনার যদি মেছতার সমস্যা থাকে, তবে ঘৃতকুমারী পাতার রস পানির সাথে মিশিয়ে খান, দৈনিক ২ বার, প্রত্যেকবার ১০ মিলিলিটার। ঘৃতকুমারীর ১টি পাতা, মধু ও ছোট শসা মাস্ক করে মেছতার ওপর লাগিয়ে রাখুন।
উপকার অনেকটা পাবেন, এটি চামড়ার ফুস্কুড়িও প্রতিরোধ করতে পারে । নারীদের মুখে যদি মেছতা থাকে, তাহলে তাদের মেক-আপ না করা ভালো । কারণ মেক-আপ ক্রিম ত্বকের সূক্ষ্মরন্ধ্রের স্বাভাবিক রূপান্তর বাধা দেবে এবং মুখের মেছতা অনেকটাই গুরুতর হবে ।
২০.অনিয়মিত এবং অস্বাভাবিক মাসিক হলে এলোভেরার উপকারিতা
ঘৃতকুমারী পাতার শাষকে ভালোভাবে চটকে চালুনীতে/ঝাকীতে পাতলা আবরণ করে ১ বার শুকানোর পর আরেকবার তার উপরেই পাতলা আবরণ লাগাতে হবে।
এভাবে কয়েকবার লাগানোর পরে আমসত্বের মতোই তৈরি হবে। মাসিকের সময় ২/৩ গ্রাম পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে নিয়মিত সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
২১.রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
যারা দীর্ঘকাল ফিব্রো-মিয়া-লজিয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর রস দারুণভাবে কাজ করে। এটি দেহে সাদা ব্লাড সেল গঠন করে যা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে।
২২.মল পরিষ্কার করতে এলোভেরার উপকারিতা
যখন সমস্যা হবে তখন সকালে খালি পেটে টাটকা ঘৃতকুমারী পাতার শাষ ১৫/২০ গ্রামের মতো ঠান্ডা পানির সাথে পরিমাণমতো চিনি মিশিয়ে শরবত করে খেলে উপকার পাবেন।
২৩.দেহের ক্ষতিকর পদার্থের অপসারণ এলোভেরার উপকারিতা
দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঔষধির মতো কাজ করে। আমরা নিয়মিত বিভিন্ন চাপে থাকি। এছাড়া চারপাশের দূষিত পরিবেশ এবং বিভিন্ন ফাস্ট-ফুড গ্রহণের কারণে প্রতিদিন পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার করা দরকার।
২৪.অ্যালোভেরা হজমি সহায়ক
প্রতিদিন ঘৃতকুমারীর রস পানে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে দেহের পরিপাকতন্ত্র সতেজ থাকে এবং কোষ্ঠ-কাঠিন্য একেবারেই দূর হয়।
২৫.হার্ট সুস্থ রাখতে অ্যালোভেরা
আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে অ্যালোভেরার জুস। অ্যালোভেরা কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রন করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে, রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ফলে দীর্ঘদিন আপনার হৃদযন্ত্র সুস্থ-সবল থাকে।
মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ অ্যালোভেরা : অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সহায়তা করে থাকে। এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায় বা উপমশ হয়।
0 মন্তব্যসমূহ